হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ......১৬ নাম ৩২ অক্ষরের মানে


 


হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

                       যখনই আমরা কাউকে ডাকি, আমরা তার নামটি ধরে ডাকি, অন্যথায়, কেউ বুঝতে পারবে না। অর্থাৎ আমরা যার নামে ডাকি সে বর্তমান এটি আমার হাত, এটি আমার পা, আমার চোখ, আমার চুল ইত্যাদি ...... তবে আমিটা কোথায় ? বা আমি কে? - কেউ বলতে পারে না। কেউ আমাদের নামে আমাদেরকে না ডাকা পর্যন্ত আমরা নিজেকে খুঁজে পাই না। যার জন্য প্রত্যেকের একটি নাম থাকে। একইভাবে, আমরা যদি ভক্তিতে তাঁর নামে ঈশ্বরকে (প্রভু) সঠিকভাবে না ডাকি, তবে সে কীভাবে বুঝবে? তিঁনি হরে কৃষ্ণ নামের  মধ্যে সর্বদা বর্তমান

মহা মন্ত্রের ইতিহাস
                    হরে কৃষ্ণ মহা-মন্ত্র কলি সন্তরণ উপনিষদে বর্ণিত ১৬ টি শব্দ ৩২ টি অক্ষর বৈষ্ণব মন্ত্র, যা চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার মাধ্যমে প্রায় ভক্তির আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল (প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে) এই মন্ত্রটির স্রষ্টা ছিলেন রঘুনাথ ভট্টাচার্য (ভট্ট), তিনি ছয় গোস্বামীদের একজন। মন্ত্রটি পরম সত্তার তিনটি সংস্কৃত নাম নিয়ে গঠিত; 'হরে', 'কৃষ্ণ', এবং 'রাম' গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মতত্ব অনুসারে, কারও মৌলিক চেতনা এবং জীবনের মূল লক্ষ্য ' ঈশ্বরের (শ্রী কৃষ্ণ) প্রতি শুদ্ধ প্রেম যদিও মহাপ্রভু সর্বদা নাম নিতেন --

কৃষ্ণ কেশব কৃষ্ণ কেশব কৃষ্ণ কেশব পহি মাম
রাম রাঘব রাম রাঘব রাম রাঘব রক্ষ মাম

 



শ্রীল প্রভুপাদজার্মানি, ১৯৭৪

               মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পরে মন্ত্রটি অভয়াচরনবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ (১৯৬৫) এবং তাঁর International Society for Krishna Consciousness (ISKCON) দ্বারা ভারতের বাইরে সুপরিচিত হয়ে ওঠে। কলি-সন্তরণ উপনিষদে মূল মন্ত্রটি ' -

হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

             ইসকন আন্দোলনের সাফল্যের পরে, এটি ভক্তদের জন্য মহামন্ত্র হয়ে ওঠে এবং প্রথমে রামের পরিবর্তে কৃষ্ণের নাম নেবার প্রবণতায় বদলে যায়

 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ

কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

মহা-মন্ত্রের অর্থ

                    'মন্ত্র' শব্দের অর্থ মনকে সঞ্চারিত করা বা মনকে উম্মুক্ত করা। 'হরে' শব্দটি ঈশ্বরের স্ত্রী বা নারী শক্তি বোঝায়। 'কৃষ্ণ' অর্থ সর্ব-আকর্ষণ এবং 'রাম' শব্দ একটি সর্ব-আনন্দ শান্তির আধার আসলে, আমরা যেভাবেই ভাবি, সেইভাবেই আমাদের লাভ হয় যার যেমন ভাব, তার তেমন লাভ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় বিষয় হল - আত্মত্যাগ যে কেউ তাঁর (প্রভু) সম্পর্কে যত চিন্তাভাবনা করে, উত্তরোত্তর তার তত লাভ হবে মহা-মন্ত্রের অর্থ এরকমই। এই নামের অনেক অর্থ রয়েছে বিভিন্ন ভক্তের চিন্তাভাবনা অনুসারে

  • মন্ত্রটি প্রথমে কলি-সন্তরণ উপনিষদে পাওয়া যায় এবং এই উপনিষদে নারদকে ব্রহ্মা নির্দেশ দিয়েছিলেন : হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে (ভগবান নারায়ণের নাম), এই ১৬ নাম কলি কালের মন্দ প্রভাব, মানব-দৈত্য, আসুরিক প্রবৃত্তি থেকে মানবকে রক্ষা উদ্ধার করবে। অন্যথায় কলির প্রভাব থেকে বাঁচিবার কোনো উপায় নাই। 
  • এমনও ধারণা করা হয় যে, 'হরে রাম' এর 'রাম' অর্থ  'রাধারমন' বা 'রাধার প্রিয়' (কৃষ্ণের অপর নাম) সর্বাধিক প্রচলিত ব্যাখ্যাটি ', রাম কৃষ্ণের পূর্ব অবতার রামায়নের শ্রীরামচন্দ্রকে বোঝায়। রাম, কৃষ্ণর প্রথম অতিরিক্ত অবতার বলরামের সংক্ষিপ্ত নাম হতে পারে
  • নারদ পঞ্চরাত্রিতে আরও বলা হয়েছে যে - হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে - এই আটটি শব্দের মধ্যে সমস্ত বৈদিক রচনা, মন্ত্র এবং জ্ঞান রয়েছে। নারদ পুরাণ শ্লোক ৩৮/১২বলা হয়েছেযে পবিত্র হরিনাম সংকীর্তন (হরে কৃষ্ণের জপ ....) এই দুষ্ট, মন্দপ্রভাব ভণ্ড কলি-যুগে একমাত্র পরিত্রাণের উপায়
হরের নাম হরের নাম হরের নামৈব কেবলম 
কলৌ নাস্তেব্য নাস্তেব্য নাস্তেব্য গতিরন্যাথা ।।
  • নামে আটটি হরে, চারটি কৃষ্ণ, চারটি রাম নাম আছে। এটি কারও কাছে খুব গোপনীয় অর্থ 'হরে' এর অর্থ 'হরণ করা' কৃষ্ণ অর্থ আকর্ষণ। প্রথম কৃষ্ণ - শ্রী গোবিন্দ, দ্বিতীয় কৃষ্ণ - শ্রী বাসুদেব, তৃতীয় কৃষ্ণ - শ্রী জগন্নাথ, চতুর্থ কৃষ্ণ - শ্রী বলভদ্র। একইভাবে, প্রথম রাম - শ্রীমতী রাধা রানী, দ্বিতীয় রাম - দেবী লক্ষ্মী, তৃতীয় রাম - দেবী সরস্বতী, চতুর্থ রাম - দেবী সুভদ্রা। গোপন তত্বটি এই মহা মন্ত্রে লুকিয়ে রয়েছে, একমাত্র আধ্যাত্মিক সদগুরুই বলতে পারবেন
  • কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম এক এবং অভিন্ন। কৃষ্ণ-এর নিজের মতো কৃষ্ণ নামও খাঁটি, পবিত্র, পূর্ণ এবং উম্মুক্ত পবিত্র হরিণাম ' অতিপ্রাকৃতের শব্দ তরঙ্গ, ব্রহ্মার কথা অনুযায়ী - গোলকধামের প্রেমের সম্পদ। তথাকথিত জ্ঞানী যুক্তিবাদীদের পক্ষে নিস্তেজ যুক্তি দিয়ে পবিত্র হরিণামের অতিপ্রাকৃত অর্থ কখনই বোঝা সম্ভব নয়

                        খুব সাধারণ ভাবে যা অবগত হয়, তা হলো স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ একম-অদ্বিতীয়ম, সৃষ্টির আদি-অন্ত। তাঁর বাম অঙ্গ থেকে শ্রীমতী রাধারাণীর সৃষ্টি। আবার শ্রীমতী রাধারাণীর থেকে দশ মহাবিদ্যার সৃষ্টি। মা কালী, মা তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলা (দেবী লক্ষ্মী) সুতরাং সব নামই রাধারাণীর অবতার গ্রাহ্য। সেই হিসাবে মহামন্ত্রের অর্থ দাঁড়ায়


রাধে কৃষ্ণ রাধে কৃষ্ণ 
কৃষ্ণ কৃষ্ণ রাধে রাধে 
রাধে কৃষ্ণ রাধে কৃষ্ণ 
   কৃষ্ণ কৃষ্ণ রাধে রাধে।  

(কারণ যেই রাম সেই কৃষ্ণ, এবং সব হরেই রাধারাণী)

..........ভুল ব্যাখ্যা হলে ক্ষমাপ্রার্থী 


No comments:

Post a Comment