হরেকৃষ্ণ।| উজ্বলনীলমণি:।| নায়ক-সহায়ভেদ: ।|


 


                শুরুতেই সকল বৈষ্ণব পদে আমার ভক্তিপূর্ণ প্রনাম। যেই বিষয় নিয়ে অদ্য হইতে সংক্ষিপ্ত আকারে ক্রমাগত চর্চা হবে, আসলে তার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমার মতো সর্বকনিষ্ঠের থেকেও অধম ভক্তের কাছে এ হেন অনাধিকার চর্চা যেন এক চরম দু:সাহসিকতা। জানি না আমার গতি কি হবে? তবে কোনো স:হৃদয় ভক্ত যদি এর সামান্যতম প্রেমভক্তি রস আস্বাদন করতে পারেন তবে এই অধমের দু:সাহসিকতা বা চর্চা হয়তো কিছুটা সফল হবে।  সেই ভক্তের করুণায় যদি আমার উদ্ধার হয়। রাধারানী আমাকে ক্ষমা, কৃপা করুন। ইতিমধ্যে আমরা নায়কভেদ: নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এক্ষনে নায়ক-সহায়ভেদ: নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেতেছি।

অথৈতস্য সহায়া: স্যু: পঞ্চধা চেটকি বিট:। 
বিদূষকঃ পিঠমর্দ্দ: প্রিয়নর্ম্মসখস্ততা। 
নর্ম্মপ্রয়োগে নৈপুণ্যং সদা গাঢ়নুরাগীতা। 
দেশকালজ্ঞাতা দাখ্যাং রুষ্ঠগোপীপ্রসাদেন:। 
নিগূঢ়মন্ত্রতেত্যাদ্যা: সহায়না গুনা মতা:। 
তত্র চেট:।।
সন্ধানশ্চতুরশ্চেটো গুঢ়কর্ম্মা প্রগলভদি:। 

                    নায়ক সকলের সহায় পাঁচ প্রকার হয়। যথা -চেটক, বিট, বিদূষক, পিঠমর্দ্দ  প্রিয়নর্ম্মসখ । সহায়দিগের গুন্ - পরিহাসবাক্য কথনে নিপুনতা, সর্বদা গাঢ় অনুরাগিত্ব, দেশকালের অভিজ্ঞতা, গোপীজন রুষ্ঠ হইলে তাঁহাদের প্রসন্নতাকরন এবং নিগূঢ় মন্ত্রণা দেওন ইত্যাদি সহায় সকলের গুন্। 

চেটক - যে ব্যাক্তি সন্ধানবিষয়ে চতুর, যাহার কর্ম্ম কেহ জানিতে পারে না, গূঢ়রূপে সম্পন্ন করে এবং যাহার বুদ্ধি অতিশয় প্ৰগভাল, পণ্ডিতগণ তাহাকে চেট বলিয়া নির্দ্দেশ করেন। গোকুলমধ্যে ভঙ্গুর, ভৃঙ্গার প্ৰভৃতি কিছু শ্রীকৃষ্ণের চেট সহায় ছিলেন। 

বিট - যে ব্যাক্তি বেশরচনা ও শ্রুশ্রূষা করনে পটু এবং ধূর্ত আর পরিবারবর্গ যাহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করে না এবং যিনি স্ত্রীবশীকরণার্থ মন্ত্রোষধি প্রয়োগ করেন, রসজ্ঞেরা তাহাকেই বিট বলিয়া কীর্তন করেন।  কড়ার ভারতিবন্ধ প্রভৃতি কতিপয় গোপ শ্রীকৃষ্ণের বিট সহায় ছিলেন। 

বিদূষক - যে ব্যাক্তি ভোজনবিষয়ে অতিশয় লোলুপ, কলহপ্রিয় এবং দেহ, বেশ ও বাক্যের বিকৃতি করিয়া হাস্যকারী হয়, তাহাকে বিদূষক বলে। মধুমঙ্গল ও বসান্তাদি গোপগণও বিদূষক বলিয়া উক্ত হয়েন। 

পিঠমর্দ্দ - যে ব্যাক্তি নায়কতুল্য গুনবান হইয়া সেই নায়কেরই অনুবৃত্তিকারী হয়, তাহাকে পিঠমর্দ্দ কহে। শ্রীদাম শ্রীকৃষ্ণের পিঠমর্দ্দ সহায়। 

প্রিয়নর্ম্মসখ - যে ব্যাক্তি অতিশয় রহস্যজ্ঞ ও সখিভাবাশ্রিত এবং প্রণয়ীগণমাধ্যে অতিশয় প্রিয়, তাহাকে প্রিয়নর্ম্মসখ কহে। গোকুলে সুবল ও দ্বারকায় অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়নর্ম্মসখ। 

তত্র স্বয়ং যথা:।।
সখি মাধবদৃগদু ত্যা: কর্মঠতা কার্ম্মনে বিচিত্রাস্তি। 
উপধা শুদ্ধাপী যয়া রুদ্ধা ত্ববং চিত্রীতেবাসি।।
বংশী যথা লালিতমাধবে।।
হ্রিয়মবগৃহ্য গৃহেভ্যঃ কর্ষতি রাধাং ঘনায় যা নিপুণা। 

দূতী দুই প্রকার। স্বয়ংদূতী ও আপ্তদূতী। তন্মধ্যে স্বয়ংদূতী কটাক্ষ এবং বংশীধ্বনি।

স্বয়ংদূতী

কটাক্ষরুপা স্বয়ংদূতী - বিশাখা কহিলেন, রাধে! মাধবের দৃষ্টিরূপা দূতীর কার্ম্মনবিষয়ে (স্ত্রীবশীকরণার্থ মন্ত্রোষধি কর্ম্মে) আশ্চর্য্য নৈপুণ্য আছে। দেখ ধর্ম্মাদি পরীক্ষন বিষয়ে তুমি শুদ্ধা হইয়াও যৎকর্তৃক রুদ্ধা হওত চিত্রিতের ন্যায় হইয়াছ। 

বংশীরুপা স্বয়ংদূতী - গার্গী কহিলেন, আহা! সদ্বৃনশজ বংশীধ্বনি রুপা দূতীর কি চমৎকার শক্তি! সে কুলকামিনীগনের লজ্জা উচ্ছেদ করে এবং শ্রীকৃষ্ণ সকাশাৎ গৃহ হইতে রাধাকে বনে আকর্ষণ করিবার নিমিত্ত ভার প্রাপ্ত হইয়াছে, অতএব তাহার সর্বোপরি উৎকর্ষ হইক। 

আপ্তদূতী

                    বীরা, বৃন্দা প্রভৃতি শ্রীকৃষ্ণের আপ্তদূতী, বীরার নিত্যনতুন প্রস্তাব-রচনা বিষয়ে শক্তি, বৃন্দাদেবীর মনোজ্ঞ চাটুবচন-কথনে পটুতা। 

                    বীরা শ্রীমতীকে সম্বোধন পূর্বক কহিলেন, হে গর্ব্বিনি! আমার বাক্য শুন. মাধবের প্রতি বিমুখ হইওনা, পূর্ব্বে তিনি গোবর্দ্ধন ধারণ পূর্ব্বক তোমাকে রক্ষা করিয়াছেন, এক্ষণে তাঁহার নবীন বয়স, অতএব হে মুঢ়ে! অনুরাগ বশত: শীঘ্র তাঁহার প্রতি অভিসার কর। (অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নবীন বয়স, অন্য কোন নায়িকার প্রতি আসক্ত হইলেও হইতে পারেন। আবার তিঁনি অতিশয় বলিষ্ঠ, রসশাস্ত্র মতে স্ত্রীগণের বলবান পুরুষের প্রতি আসক্তি বেশি হয়। তাই রাধে তোমার বিলম্ব করা একেবারেই অনুচিত)

No comments:

Post a Comment