হরেকৃষ্ণ।| উজ্বলনীলমণি:।| নায়কভেদ: ।|



                 শুরুতেই সকল বৈষ্ণব পদে আমার ভক্তিপূর্ণ প্রনাম। যেই বিষয় নিয়ে অদ্য হইতে সংক্ষিপ্ত আকারে ক্রমাগত  চর্চা হবে, আসলে তার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমার মতো সর্বকনিষ্ঠের থেকেও অধম ভক্তের কাছে এ হেন অনাধিকার চর্চা যেন এক চরম দু:সাহসিকতা। জানি না আমার গতি কি হবে? তবে কোনো স:হৃদয় ভক্ত যদি এর সামান্যতম প্রেমভক্তি রস আস্বাদন করতে পারেন তবে এই অধমের দু:সাহসিকতা বা চর্চা হয়তো কিছুটা সফল হবে।  সেই ভক্তের করুণায় যদি আমার উদ্ধার হয়। রাধারানী আমাকে ক্ষমা, কৃপা করুন। 

চতুঃষষ্ঠীরসবিবৃতি

বিপ্রলম্ভ (প্রতারণা, বঞ্চনা, বিরহ, নায়ক নায়িকার বিচ্ছেদ) চার প্রকার

১. পূর্বরাগ : সাক্ষাৎ দর্শন, চিত্রপটে দর্শন, স্বপ্নে দর্শন, বন্দী মুখে শ্রবণ, দ্যূতিমুখে শ্রবণ, সখীমুখে শ্রবণ, গুণিজনার গানে শ্রবণ, বংশীধ্বনি শ্রবণ। 
২. মান : সখীমুখে শ্রবণ, শুখমুখে শ্রবণ, মুরলীধবনি শ্রবণ, বিপক্ষগাত্রে ভোগাংক দর্শন, প্রিয়গাত্রে ভোগচিহ্ন দর্শন, গোত্র স্খলন, স্বপ্নে দর্শন, অন্য নায়িকার সঙ্গ দর্শন। 
৩. প্রেমবৈচিত্ত্য : শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আক্ষেপ, নিজ প্রতি আক্ষেপ, সখীর প্রতি আক্ষেপ, দ্যুতির প্রতি আক্ষেপ,মুরলীর প্রতি আক্ষেপ, বিধাতার প্রতি আক্ষেপ, কন্দর্প প্রতি আক্ষেপ, গুরুজন প্রতি আক্ষেপ। 
৪. প্রবাস :  ভাবি, মথুরাগমন, দ্বারকাগমন, কালিয়দমন, গোচারণ, নন্দমোক্ষণ, কার্যানুরোধ, রাসে অন্তর্ধ্যান। 

সম্ভোগ চার প্রকার 

১. সংক্ষিপ্ত সম্ভোগ : বাল্যাবস্থ্যায় মিলন, গোষ্ঠে মিলন, গোদোহন, অকস্মাৎ চুম্বন, হস্তাকর্ষন, বস্ত্রাকর্ষন, বর্ত্মরোধন, রতিভোগ। 
২. সংকীর্ণ সম্ভোগ : মহারাস, জলক্রীড়া, কুঞ্জলীলা, দানলীলা, বংশীচুরি, নৌকাবিলাস, মধুপান, সূর্য্যপূজা। 
৩. সম্পন্ন সম্ভোগ : সুদূর দর্শন, ঝুলনযাত্রা, হোলীলীলা, প্রহেলিকা, পাশাখেলা, নর্তকরাস, রসালস, কপটনিদ্রা। 
৪. সমৃদ্ধিমান সম্ভোগ :  সপ্নে মিলন, কুরুক্ষেত্র, ভাবোল্লাস, ব্রজাগমন, বিপরীতসম্ভোগ, ভোজনকৌতুক, একত্রে নিদ্রাবস্থা, স্বাধীনভর্ত্তিকা।
মঙ্গলাচরণ 

শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণাভ্যাং নমঃ 
নামাকৃষ্টরসজ্ঞ: শীলেনোদ্দীপয়ন  সদানন্দং। 
নিজরূপোৎসবদায়ী সনাতনাত্মা প্রভুর্জয়তি।। 

            যাঁহার কৃষ্ণাদি নামসংকীর্তন দ্বারা জিহ্বা আকৃষ্ট অর্থাৎ বশীকৃতা হইয়াছে, যিনি আপনার শীলতাগুণে সাধুজনের আনন্দ উদ্দীপ্ত করিতেছেন এবং তদুনগত রূপনামক কোন ব্যাক্তির যাঁহা হইতে আনন্দানুভব হইতেছে সেই সনাতন নামা গোস্বামীকে নমস্কার করি। 

মধুরভক্তি রসরাজলক্ষণ

বক্ষ্যমাণৈ ব্বিরভাবাদৈ: স্বাদ্যতাং মধুরা রতি। 
নীতা ভক্তিরস: প্রোক্ত মধুরাখ্য মনীষিভি: ।।
তত্র বিভাবেশ্বালম্বনা:।

                বক্ষ্যমান বিভাব, অনুভাব, সাত্বিক এবং সঞ্চারি প্রভৃতি কার্য কারণ সহকারী ভাব দ্বারা মধুরা রতি আস্বাদনীয় হইলে পন্ডিতেরা তাহাকেই মধুরাখ্য ভক্তিরস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। 
                    রতি বিষয়ক আস্বাদনের হেতুকে বিভাব বলে.ঐ বিভাব দুই প্রকার - আলম্বন ও উদ্দীপন। সেই উদ্দীপন আবার দুই প্রকার। কৃষ্ণবিষয়ক উদ্দীপন ও ভক্তবিষয়ক উদ্দীপন। 

কৃষ্ণবিষয়ক উদ্দীপন :

                পূর্বরাগবতি শ্রীরাধা পৌর্ণমাসীকে প্রনাম করিলে ঐ দেবী রাধারাণীকে আশীর্বাদ করিলেন - রাধে! যাঁহার নবজলধর সদৃশ আকৃতি, যিনি অপূর্ব লীলার নিধি স্বরূপ, যাঁহার পদদ্যুতি অবলোকন করিয়া নিখিল কন্দর্পের রূপ গরিমা লঘুত্ব প্রাপ্ত হয়, যিনি আপনার কটাক্ষ রুপা নটির পটুতাদ্বারা সকলের চিত্ত বিমোহিত করেন, সেই যুবতীগণের ভাগ্যফলরূপী কোন এক অনির্বচনীয় পুরুষ তোমার হর্ষ বিধান করুন। 

শ্রীকৃষ্ণের বিবিধ প্রকার গুণ :

                    সুরম্য, মধুর, সমস্তসল্লক্ষণাক্রান্ত, বলিষ্ঠ, নবযৌবনান্মিত, বক্তা, প্রিয়ভাষী, বুদ্ধিমান, সুপন্ডিত, প্রতিভান্বিত, ধীর, বিদগঘ, চতুর, সুধী, কৃতজ্ঞ, দক্ষিণ, প্রেমবশ্য, গম্ভীর, বরিয়ান, কীর্তিমান, নারীজন-মনোহারী, নিত্যনতুন, প্রিয়তম, বংশীধারী, ইত্যাদি শ্রীকৃষ্ণের মধুর রস বিষয়ক গুণ। 

        উল্লেখ থাকে যে ঔপপত্য ভাবকে ঘৃণিতরূপে বর্ণনা করিয়াছেন তাহা প্রাকৃতনায়পর (পার্থিব জগতের নায়ক), শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক বলিতে পারা যায় না, যেহেতু মধুর রস আস্বাদানার্থই তাঁহার অবতার। 

 তথাচ প্রাঞ্চ:।। 
শৃঙ্গাররসসর্বস্ব্যং শিখিপিঞ্জবিভূষনং।
অঙ্গীকৃতনরাকারমাশ্রয়ে ভুবনাশ্রয়ং ।।

                যাঁহার শৃঙ্গাররসই সর্ব্বসম্পত্তি, ময়ূরপুচ্ছ বিভূষণ এবং যিনি নরাকারকে আশ্রয় করিয়াছেন, সেই ত্রিভুনাশ্রয় শ্রীকৃষ্ণকে আশ্রয় করি। পতি ও উপপতি, প্রত্যেকের বৃত্তিভেদে অনুকূল, দক্ষিণ, শট ও ধৃষ্ঠ চারি প্রকার ভেদ হয়। শ্রীকৃষ্ণবিষয়ে কোন ভাবই অযুক্তি নহে। যেহেতু তাঁহাতে সকল ভাবের সম্ভাবনা আছে। 

  • অনুকূল - শ্রীরামচন্দ্র যেমন কেবল শ্রীসীতাতেই অনুরক্ত ছিলেন, তদ্রুপ যে ব্যাক্তি অন্যললনা বিষয়ক স্পৃহা পরিহার করত: এক স্ত্রীতেই অতিশয় আসক্ত হয় তাহাকেই অনুকূল বলিয়া কীর্তন করা যায়। 
  •  দক্ষিণ - যে ব্যাক্তি অগ্রে এক স্ত্রীতে আসক্ত হইয়া কদাচিৎ অন্য কারোর প্রতি অনুরক্ত হয় কিন্তু পূর্ব্ব-প্রণয়িনীর গৌরব, ভয় ও প্রেম পরিত্যাগ করে না, রসজ্ঞ-পন্ডিতগণ তাহাকেই দক্ষিণ বলিয়া বর্ণনা করেন। অনেক নায়িকাতে যাহার তুল্যভাব এমত পুরুষকেও দক্ষিণ কহা যায়। 
  •  শট - যে ব্যাক্তি সম্মুখে প্রিয়ভাষী হইয়া পরোক্ষে অতিশয় বিপ্রিয় করে ও গুরুতর অপরাধে অপরাধী হয়, পন্ডিতগণ তাহাকে শট বলিয়া নির্দ্দেশ করেন। 
  • ধৃষ্ঠ - অন্য যুবতীর ভোগ-চিহ্ন দৃশ্যমান হইলেও যে ব্যাক্তি নির্ভয় ও মিথ্যা বচনে অতিশয় দক্ষ তাহাকে ধৃষ্ট বলা যায়। 

নায়কভেদ 

দ্বাদশাত্মা চতুর্বিংশত্যাত্মা পত্যাদিযুগ্মত:।
নায়ক: সোহনুকুলাদৈ: স্যাৎ ষন্নবতিধোদিত:।।

                        প্রথমতঃ নায়ক চারি প্রকার হয়। যথা - ধীরোদাত্ত, ধীরললিত, ধীরোদ্ধত ও ধীরশান্ত। ইহারা প্রত্যেকে পূর্ণতম, পূর্ণতর, ও পূর্নভেদে দ্বাদশ প্রকার। ঐ দ্বাদশ নায়ক আবার পতি উপপতি ভেদে চব্বিশ প্রকার হয়। পুনশ্চ অনুকূল, দক্ষিণ, শট ও ধৃষ্ঠ এই চারি ভেদে চব্বিশ প্রকার গুন চার (8) অর্থাৎ ছিয়ানব্বই প্রকার  হয়, অর্থাৎ সাকল্যে নায়ক সংখ্যা ষঠ নবতি প্রকার। 

contd....নায়ক সহায়ভেদ:

No comments:

Post a Comment