চতুঃষষ্ঠীরসবিবৃতি
বিপ্রলম্ভ (প্রতারণা, বঞ্চনা, বিরহ, নায়ক নায়িকার বিচ্ছেদ) চার প্রকার
সম্ভোগ চার প্রকার
নামাকৃষ্টরসজ্ঞ: শীলেনোদ্দীপয়ন সদানন্দং।
নিজরূপোৎসবদায়ী সনাতনাত্মা প্রভুর্জয়তি।।
যাঁহার কৃষ্ণাদি নামসংকীর্তন দ্বারা জিহ্বা আকৃষ্ট অর্থাৎ বশীকৃতা হইয়াছে, যিনি আপনার শীলতাগুণে সাধুজনের আনন্দ উদ্দীপ্ত করিতেছেন এবং তদুনগত রূপনামক কোন ব্যাক্তির যাঁহা হইতে আনন্দানুভব হইতেছে সেই সনাতন নামা গোস্বামীকে নমস্কার করি।
মধুরভক্তি রসরাজলক্ষণ
তত্র বিভাবেশ্বালম্বনা:।
রতি বিষয়ক আস্বাদনের হেতুকে বিভাব বলে.ঐ বিভাব দুই প্রকার - আলম্বন ও উদ্দীপন। সেই উদ্দীপন আবার দুই প্রকার। কৃষ্ণবিষয়ক উদ্দীপন ও ভক্তবিষয়ক উদ্দীপন।
কৃষ্ণবিষয়ক উদ্দীপন :
পূর্বরাগবতি শ্রীরাধা পৌর্ণমাসীকে প্রনাম করিলে ঐ দেবী রাধারাণীকে আশীর্বাদ করিলেন - রাধে! যাঁহার নবজলধর সদৃশ আকৃতি, যিনি অপূর্ব লীলার নিধি স্বরূপ, যাঁহার পদদ্যুতি অবলোকন করিয়া নিখিল কন্দর্পের রূপ গরিমা লঘুত্ব প্রাপ্ত হয়, যিনি আপনার কটাক্ষ রুপা নটির পটুতাদ্বারা সকলের চিত্ত বিমোহিত করেন, সেই যুবতীগণের ভাগ্যফলরূপী কোন এক অনির্বচনীয় পুরুষ তোমার হর্ষ বিধান করুন।
শ্রীকৃষ্ণের বিবিধ প্রকার গুণ :
সুরম্য, মধুর, সমস্তসল্লক্ষণাক্রান্ত, বলিষ্ঠ, নবযৌবনান্মিত, বক্তা, প্রিয়ভাষী, বুদ্ধিমান, সুপন্ডিত, প্রতিভান্বিত, ধীর, বিদগঘ, চতুর, সুধী, কৃতজ্ঞ, দক্ষিণ, প্রেমবশ্য, গম্ভীর, বরিয়ান, কীর্তিমান, নারীজন-মনোহারী, নিত্যনতুন, প্রিয়তম, বংশীধারী, ইত্যাদি শ্রীকৃষ্ণের মধুর রস বিষয়ক গুণ।
উল্লেখ থাকে যে ঔপপত্য ভাবকে ঘৃণিতরূপে বর্ণনা করিয়াছেন তাহা প্রাকৃতনায়কপর (পার্থিব জগতের নায়ক), শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক বলিতে পারা যায় না, যেহেতু মধুর রস আস্বাদানার্থই তাঁহার অবতার।
শৃঙ্গাররসসর্বস্ব্যং শিখিপিঞ্জবিভূষনং।
অঙ্গীকৃতনরাকারমাশ্রয়ে ভুবনাশ্রয়ং ।।
যাঁহার শৃঙ্গাররসই সর্ব্বসম্পত্তি, ময়ূরপুচ্ছ বিভূষণ এবং যিনি নরাকারকে আশ্রয় করিয়াছেন, সেই ত্রিভুনাশ্রয় শ্রীকৃষ্ণকে আশ্রয় করি। পতি ও উপপতি, প্রত্যেকের বৃত্তিভেদে অনুকূল, দক্ষিণ, শট ও ধৃষ্ঠ চারি প্রকার ভেদ হয়। শ্রীকৃষ্ণবিষয়ে কোন ভাবই অযুক্তি নহে। যেহেতু তাঁহাতে সকল ভাবের সম্ভাবনা আছে।
- অনুকূল - শ্রীরামচন্দ্র যেমন কেবল শ্রীসীতাতেই অনুরক্ত ছিলেন, তদ্রুপ যে ব্যাক্তি অন্যললনা বিষয়ক স্পৃহা পরিহার করত: এক স্ত্রীতেই অতিশয় আসক্ত হয় তাহাকেই অনুকূল বলিয়া কীর্তন করা যায়।
- দক্ষিণ - যে ব্যাক্তি অগ্রে এক স্ত্রীতে আসক্ত হইয়া কদাচিৎ অন্য কারোর প্রতি অনুরক্ত হয় কিন্তু পূর্ব্ব-প্রণয়িনীর গৌরব, ভয় ও প্রেম পরিত্যাগ করে না, রসজ্ঞ-পন্ডিতগণ তাহাকেই দক্ষিণ বলিয়া বর্ণনা করেন। অনেক নায়িকাতে যাহার তুল্যভাব এমত পুরুষকেও দক্ষিণ কহা যায়।
- শট - যে ব্যাক্তি সম্মুখে প্রিয়ভাষী হইয়া পরোক্ষে অতিশয় বিপ্রিয় করে ও গুরুতর অপরাধে অপরাধী হয়, পন্ডিতগণ তাহাকে শট বলিয়া নির্দ্দেশ করেন।
- ধৃষ্ঠ - অন্য যুবতীর ভোগ-চিহ্ন দৃশ্যমান হইলেও যে ব্যাক্তি নির্ভয় ও মিথ্যা বচনে অতিশয় দক্ষ তাহাকে ধৃষ্ট বলা যায়।
নায়কভেদ
নায়ক: সোহনুকুলাদৈ: স্যাৎ ষন্নবতিধোদিত:।।
প্রথমতঃ নায়ক চারি প্রকার হয়। যথা - ধীরোদাত্ত, ধীরললিত, ধীরোদ্ধত ও ধীরশান্ত। ইহারা প্রত্যেকে পূর্ণতম, পূর্ণতর, ও পূর্নভেদে দ্বাদশ প্রকার। ঐ দ্বাদশ নায়ক আবার পতি উপপতি ভেদে চব্বিশ প্রকার হয়। পুনশ্চ অনুকূল, দক্ষিণ, শট ও ধৃষ্ঠ এই চারি ভেদে চব্বিশ প্রকার গুন চার (8) অর্থাৎ ছিয়ানব্বই প্রকার হয়, অর্থাৎ সাকল্যে নায়ক সংখ্যা ষঠ নবতি প্রকার।
No comments:
Post a Comment