অজামিল চরিত


 


                    ভগবানের নাম যখন ভগবানকে উদ্দেশ্য করে উচ্চারিত না হয়ে, অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে উচ্চারিত হয় তাহাই ''নামাভ্যাস'' এই নাম অভ্যাসেও প্রাণী উদ্ধার হয়। ''নাম অভ্যাসে মুক্তি হয় সর্বশাস্ত্রে দেখি, শ্রীভাগবতে তার অজামিল সাক্ষী'' অজামিল ছিলেন কান্যকুব্জের (বর্তমান ভারতের কনৌজের) অধিবাসী। তার পিতা-মাতা তাকে সদাচার ব্রাহ্মনে পরিনত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত জন্মের কর্মদোষে, এক সকালে নির্জন বনের মধ্যে এক অপ্সরা সম সুন্দরী ষোড়শী কন্যার সহিত তার পরিচয় হয়। আসলে সেই কন্যাটি ছিল এক পতিতা সেই বেশ্যার প্রতি আসক্তিপুর্বক অজামিলের সদাচার ভ্রষ্ট অধঃপতিত হয়ে সেই পতিতাকে বিবাহ করে বনের পাশে এক বাড়ি গড়ে পাপিষ্ঠ ভোগের জীবন শুরু করেন। আসক্তি মায়ার বশে অজামিল অর্থ উপার্জনের দরুন চুরি, ডাকাতি, মিথ্যাচার, মদ্যপান এর মতো সমস্ত পাপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন। সেই পতিতার গর্ভে অজামিলের দশটি পুত্র সন্তান হয়, এবং তার মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল নারায়ন। অজামিলের মৃত্যুর সময় যমদুতেরা যখন নরকে নিয়ে যেতে আসে, তখন যমদুতের বিকৃত, বিকট চেহেরার ভয়ে উচ্চস্বরে তার প্রিয়পুত্র নারায়নকে ডাকতে থাকে। এরফলে তার মনে ভগবান নারায়নের স্মৃতি উদয় হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চারজন বিষ্ণুদুত এসে হাজির হয়ে যমদুতের হাত থেকে অজামিলকে মুক্ত করেন এবং অজামিল বৈকূণ্ঠলোক প্রাপ্ত হন। যমদূতেরা নিরাশ আশ্চর্য হয়ে যমরাজের কাছে গেলে যমরাজ তাদের বিস্তারিতভাবে ভাগবত-ধৰ্ম সম্বন্ধে উপদেশ দেন যমরাজ এইভাবে যমদূতদের সান্তনা দিয়েছিলেন

                যমরাজ বলেছিলেন, অজামিল যদিও তার পুত্ৰকে (নারায়ন) ডেকেছিলেন, তবুও তিনি নারায়ণের পবিত্ৰ নাম উচ্চারণ করেছিলেন এবং সেই নামাভ্যাসের ফলেই তিনি বিষ্ণুদূতদের সঙ্গ লাভ করেছিলেন, যাঁরা তোমাদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলেন তা যথাৰ্থই হয়েছে, কারণ মহা পাপিষ্ঠও যদি ভগবানের নাম গ্ৰহণ করে, সেই নাম সম্পূৰ্ণরুপে অপরাধশূন্য না হলেও তাকে আর জড় জগতে জন্মগ্ৰহণ করতে হয় না। ভগবানের পবিত্ৰ নাম গ্ৰহণের ফলে, চারজন বিষ্ণুদূতের সঙ্গে অজামিলের সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর এবং তাকে উদ্ধার করে বৈকুণ্ঠধামে নিয়ে গিয়েছিলেন। 

এখন সব থেকে প্রধান প্রশ্ন, এত বড় মহাপাপিষ্ঠ কিভাবে ভগবানের কৃপা লাভ করে ?

                    এর উত্তর সাধুসঙ্গ এবং সাধুকৃপা। প্রথম জীবনে অজামিল একজন নিষ্ঠাবান, সদাচার ব্রাহ্মণ ছিলেন। অসৎ বিবাহ কর্মদোষে তার মহাপতিত অধঃগতি জীবন প্রাপ্তি হয়। অজামিল যখন মহাপাপিষ্ঠ জীবনে লিপ্ত, সেইসময় তার গ্রামে কয়েকজন সাধুর আগমন হয়। সেই সাধুরা তৃষ্ণার্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলেন। গ্রামের মানুষদের জিজ্ঞেসা করেন কোথায় ব্রাহ্মণ বাড়ি পাবেন, তারা সেবা করবেন কারণ ব্রাহ্মণ বাড়ি ছাড়া তারা খাবেন না। গ্রামের মানুষজন অনিচ্ছাসত্ত্বেও অজামিলের গৃহ দেখিয়ে দেন। কিন্তু ক্ষুধার্ত সাধুরা কিছু খেতেচেলে, স্বামী-স্ত্রী দুজনমিলে সাধুদের কটু বাক্য করেন, শেষে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু চাল, ডাল, সবজি তাদের ঘরের বাইরে দিয়ে দেন। সাধুরা তাই দিয়ে কোনোরকমে রন্ধন করে ভোজন করেন বিশ্রাম নেন। 

 


                    পরদিন সকালবেলা সাধুরা যাবার সময় অজামিলকে ডাকেন। অজামিল আসলে সাধুরা বলেন তুমি কি চাও বলো ? অজামিল বলে তোমরা ভিখারি সাধু, মানুষের কাছে চেয়ে খাও, তোমরা আবার আমাকে কি দেবে ? সাধুরা উত্তর দেন, আমরা তোমার গৃহে আহার করেছি, তোমাকে কিছু না দিয়ে তো যেতে পারবো না। তথাপি অজামিল কিছু চায় না, সাধুদের চলে যেতে বলে।  তখন সাধুরা বলেন, তোমার যা গতি দেখছি, তাতে তোমার উদ্ধার নেই। তোমার যে ছোট সন্তান হবে তার নাম নারায়ণ রাখবে, তাতেই তোমার গতি হবে। এই সাধুদের কৃপায় অজামিল শেষে ভগবানের কৃপা লাভ করেন। 

 

No comments:

Post a Comment