মহাযোগী, চিরজীবী ঋষি
মার্কণ্ডেয় ছিলেন
একজন
প্রাচীন হিন্দু
ঋষি
এবং
ঋষি
ভৃগুর
বংশে
জন্ম।
মার্কণ্ডেয় শিব
ও
বিষ্ণু
উভয়
দেবতারই এক
বিশেষ
ভক্ত।
একাধিক
পুরাণে
তার
উল্লেখ
রয়েছে।মার্কণ্ডয়ের পরম
আয়ু
ছিল
মাত্র
ষোলো
বছর।
তিনি
ছিলেন
ভগবান
শিবের
ভক্ত।
ষোলো
বছর
বয়সে
যখন
তার
মৃত্যুকাল আসন্ন,
তখন
সে
একটি
শিবলিঙ্গ গড়ে
পূজা
শুরু
করে
।
যম
তাকে
নিয়ে
যেতে
এলে
সে
সেই
শিবলিঙ্গ ছেড়ে
যেতে
নারাজ।
যমরাজ
তার
রজ্জু
দিয়ে
মার্কণ্ডেয়কে বন্ধন
করলে,
মার্কণ্ডেয় শিবলিঙ্গটিকে আঁকড়ে
ধরে
এবং
ভগবান
মহাদেবের কাছে
সাহায্য প্রার্থনা করতে
থাকেন।
ভক্তবৎসল বাবা
ভোলানাথ ভক্তের
দুর্দশা দেখে
শিবলিঙ্গ থেকে
প্রকট
হন।
ক্রূদ্ধ শিব
নিষেধ
করেন
যমরাজকে। যম
পরাভূত
হন
এবং
মার্কণ্ডেয়ের উপর
তার
ক্রোধ
ত্যাগ
করে
ফিরে
যান।
ভগবান
শিব
যমকে
পরাজিত
করে
মৃত্যুঞ্জয় নামে
পরিচিত
হন।
ভগবান
দেবাদিবের বরে
মার্কণ্ডেয় ঋষি
অমরত্ব
লাভ
করেন।
এমন
মনে
করা
হয়
যে,
তিনি
আজও
পৃথিবীতে জীবিত।
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
মার্কণ্ডেয় ঋষির
রচনা
বলে
মনে
করা
হয়।
ভৃগু বংশের সন্তানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন ঋষি মার্কন্ডেয়। পিতার নিকট হইতে দ্বিজাতি সংস্কার লাভপূর্বক বেদসকল অধ্যয়ন করিয়া মার্কন্ডেয়, ধর্ম সহকারে তপস্যায় ও বেদপাঠে নিযুক্ত হইলেন। তিনি মহাব্রতাচারন করিতে আরম্ভ করিলেন। ধীরে ধীরে জটাধারী হলেন, বল্কল পরিধান, কমণ্ডলু, দন্ড, উপবীত, যজ্ঞসূত্র ধারণ করিলেন। সকাল ও সন্ধ্যায় ভিক্ষাদ্রব্য আহরণ করিয়া গুরুকে অর্পণ করিতেন। গুরু অনুমতি দেবার পর আহার করিতেন, নতুবা উপবাসেই থাকতেন।
এই প্রকার তপস্যায় ও
বেদ
পাঠে
নিযুক্ত হয়ে
কোটি
কোটি
বৎসর
হৃষীকেশের (শ্রী
হরি)
পূজা
করিলেন। ব্রহ্মা, শিব,
বিভিন্ন ভূতসমূহ তিনি
দর্শন
করেছিলেন। মহাযোগে চিত্ত
সংযোজন
করে
ছয়
মন্বন্তর কাল
তপস্যায় রত
ছিলেন।
দেবরাজ
ইন্দ্র
এই
বিষয়
শ্রবণ
করিয়া
সপ্তম
মন্বন্তরে তাঁহার
তপস্যায় ভয়
পাইলেন
এবং
নানা
ব্যাঘাত দিতে
লাগিলেন। গন্ধর্ব, অপ্সরা,
দেবকন্যা, লোভ,
মদন
সবাইকে
একে
একে
প্রেরণ
করিতে
লাগিলেন। কিন্তু
সর্প
দেখিয়া
বালক
যেমন
পলায়ন
করে
তদ্রুপ
একে
একে
দেবরাজ
ইন্দ্র
কর্তৃক
প্রেরিত অনুচরগন মহামুনির তেজে
পলায়ন
করিলেন। অবশেষে,
নর-নারায়ণ দুই রূপ
ধরে
ভগবান
শ্রী
হরি
প্রকাশিত হইলেন।
স্বয়ং জগদীশ্বরের সাক্ষাৎ পাবার
পর,
মার্কণ্ডেয় মুনির
আনন্দের আর
সীমা
রইল
না।
তিনি
ভগবান
শ্রী
হরির
নানা
স্তব
পাঠ
করলেন
।
স্তবে
সন্তুষ্ট হয়ে
নর-নারায়ণ মার্কণ্ডেয় মুনির
উদ্দেশ্যে বলিলেন,
তুমি
তপস্যা,
বেদ
অধ্যয়ান, নিয়ম,
আমার
প্রতি
আঁচলা
ভক্তি
ও
মনের
একাগ্রতা দ্বারা
সিদ্ধি
লাভ
করেছ
।
আমি
তোমাকে
বরদান
করতে
চাই?
বল
তুমি
কি
চাও?
মার্কণ্ডেয় মুনি
উত্তর
দিলেন,
আপনাকে
পাবার
পর
আর
কি
থাকতে
পারে?
তথাপি
যদি
কিছু
দিতে
চান,
আপনার
সৃষ্ট
মায়া
দেখার
ইচ্ছা
প্রকাশ
করি
।
প্রভু
কহিলেন,
ঠিক
আছে
তাই
হোক
এবং
অদৃশ্য
হয়ে
গেলেন
।
একদিন সন্ধ্যাকালে পুষ্পভদ্রাতটে ঋষি
মার্কন্ডেয় বসে
ছিলেন।
এমন
সময়
হটাৎ
ভীম
প্রভঞ্জন (মহাপ্রলয়)উত্থিত
হইল।
প্রচন্ড শব্দে
জ্বলোচ্ছাস যেন
গ্রাস
করিতে
উদ্যত
হইল।
সেই
সঙ্গে
প্রবল
বেগে
বায়ু
ও
উচ্চরবে গর্জন
করিতে
করিতে
চতুর্দিকে বৃষ্টিধারা বর্ষণ
করিতে
লাগিল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই
পাহাড়,
স্থল,
আকাশ,
ত্রিভুবন (স্বর্গ,
মর্ত্য,
পাতাল)
সেই
উত্তাল
মহাজলরাশির তলায়
তলিয়ে
গেলো।
চারিদিক ঘন
অন্ধকার, বিদ্যুতের ঝলকানি,
সমুদ্রের গর্জন,
যতদূর
চোখ
যায়
শুধু
জল
আর
জল।
কেবল
সেই
মহা
মুনি
একাকী
অবশিষ্ট রহিলেন।
ক্ষুধা,
তৃষ্ণায় ব্যাকুল; অন্ধের
ন্যায়
তিনি
ছুটে
বেড়াচ্ছেন। কিন্তু
ঋষি
দিক,
আকাশ,
পৃথিবীর স্থলভূমি কোথায়
কিছুই
নির্ণয়
করিতে
সক্ষম
হইতেছেন না।
অপরদিকে ক্ষুধার্ত কুম্ভীর, মকর,
হাঙ্গর,
বড়
বড়
জলদৈত্যরা হাঁ
করে
তাকে
গিলতে
উদ্যত।
প্রাণভয়ে ঋষি
ছুটে
বেড়াচ্ছেন - সেই
ছোটার
কোন
শেষ
নাই।
এইভাবে
মুনি
বহু
বৎসর
ভীত,
পাগলসম
ও
উদ্দেশ্যহীন ভাবে
ভ্ৰমণ
করিতে
থাকিলো। তিনি
কি
করবেন,
কোথায়
যাবেন
কিছুই
স্থির
করিতে
পারিলেন না।
যেইমাত্র ঋষি শিশুর নিকট
উপস্থিত হলেন,
শিশুর
নিঃশ্বাসের সাথে
মশার
ন্যায়
শিশুর
উদরে
প্রবেশ
করলেন।
দেখলেন
প্রলয়ের পূর্বে
যেমন
বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড ছিল, ঠিক তেমন
সাজানো
গোছানো। সেই
বালকের
উদরে
দ্বীপ,
দেশ,
বন,
নদী,
পাহাড়,
আকাশ,
নগর
সকল
কিছু
বর্তমান, শিশুর
উদরে
বিশ্ব
করিতেছেন দর্শন।
পুনরায়
প্রশ্বাসে ঋষি
বাইরে
আসিলো।
পুনর্বার মার্কন্ডেয় সেই
উত্তাল
সাগরে
ভাসলেন। তখন
ভগবান
তাঁর
মায়া
সম্বরণ
করিলেন। ঋষি
দেখলেন
তিনি
পুনরায়
তাঁর
আশ্রমে
বসে
আছেন।
কিছুই
স্থির
করতে
পারলেন
না।
তবে
প্রভুর
মায়া
দেখতে
চাওয়ায়,
ঋষি
মনে
লজ্জা
বোধ
করলেন।
No comments:
Post a Comment